জগন্নাথপুর প্রতিনিধি (সুনামগঞ্জ)ঃ জগন্নাথপুর উপজেলার মীরপুর ইউনিয়নে হাসান ফাতেমাপুর
গ্রামে করোনা উপসর্গে চারঘন্টা ব্যবধানে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় গ্রামজুড়ে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
স্বামীর জানাযা নামাজের প্রাক্কালে স্ত্রীর মৃত্যুতে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। করোনা উপসর্গ থাকার পরও করোনা পরীক্ষা না করে চিকিৎসা না নেওয়ায় অসচেতনতায় তাদের মৃত্যু হয়েছে বলে সচেতন এলাকাবাসীর অভিমত। আতঙ্কিত গ্রামবাসীকে মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিকা কেন্দ্রে টিকার নিবন্ধন করতে ভিড় করতে দেখা গেছে। দুপুরে হাসান ফাতেমাপুর গ্রামে গিয়ে জানা যায়, সাম্প্রতিককালে গ্রামের জ্বর সর্দি কাশির সহ করোনা উপসর্গের প্রকোপ দেখা দিয়েছে মারাত্মকভাবে। কেউ কেউ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে নমুনা পরীক্ষা করালেও অধিকাংশ লোক নমুনা পরীক্ষা না করে ঔষধের দোকান থেকে ঔষধ কিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। মারা যাওয়া গ্রামের ছামির আলী ও তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম দম্পতির পরিবার করোনা উপসর্গে ভুগলেও করোনা পরীক্ষা না করে স্থানীয় ঔষধের দোকান থেকে ঔষধ সেবন করেছেন। সোমবার করোনা উপসর্গে স্বামীর মৃত্যুর চারঘন্টা পর স্ত্রীর মৃত্যু হওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে এসব বিষয় আলোচিত হচ্ছে।
গ্রামের বাসিন্দা তরুণ সমাজকর্মী বাদশা মিয়া বলেন, পরিবারটি গ্রামের একটি ধনাঢ্য পরিবার হলেও করোনা নিয়ে তাদের সচেতনতার অভাব ছিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার পাশাপাশি তাঁরা করোনা উপসর্গের বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করলে হয়তো এমন মৃত্যু হতো না।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, গ্রামে এখনো করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি উপেক্ষিত রয়েছে। হাসান ফাতেমাপুর গ্রামে প্রায় দেড় শতাধিক পরিবারের বসবাস। অধিকাংশ পরিবারে জ্বর সর্দি কাশি সহ করোনা উপসর্গে আক্রান্ত লোক থাকলে নমুনা পরীক্ষায় তাদের অনীহা। বর্তমানে গ্রামে করোনা আতঙ্ক রয়েছে।
মীরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য খলিল মিয়া বলেন, করেনায় কিছু দিন আগে এ ওয়ার্ডে মা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। ১ আগস্ট করোনায় মারা যান রাশিদ আলী নামে এক যুবক। সোমবার স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু এলাকাবাসী আতঙ্কিত।
হাসান ফাতেমাপুর গ্রামে কথা হয় মীরপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্যকর্মী জীবন বণিক এর সঙ্গে। তিনি বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নির্দেশনা মোতাবেক ওই বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সবার সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেছি। এছাড়াও ওই পরিবারের সবাইকে নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়াও পুরো গ্রামে আমরা স্বাস্থ্য বার্তা পৌঁছে দিয়ে টিকার নিবন্ধন করে সবাইকে টিকা দিতে উৎসাহিত করায় অনেকেই টিকা নিতে আগ্রহী হয়েছেন। হাসান ফাতেমাপুর গ্রামের জহুর মিয়া বলেন, আমার পরিবারের সবাই কে নিয়ে মঙ্গলবার টিকা দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গিয়ে নিবন্ধন করে এসেছি।
করোনা উপসর্গে মারা যাওয়া ছামির আলী ও তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা বেগম দম্পতির ছেলে রাকিব উদ্দিন বলেন, আমরা পরিবারের সবাই হালকা জ্বরে ভুগলে এটা কে সাধারণ জ্বর হিসেবে মনে করে ঔষধ সেবন করেছি। ২৬ জুলাই হালকা জ্বর নিয়েই আমার বাবা টিকা নিয়েছিলেন। এভাবে তাদের মৃত্যু হবে ভাবতে পারিনি। তিনি বলেন, আমরা পরিবারের সবাই নমুনা পরীক্ষা করব।
মীরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক বলেন, মীরপুর ইউনিয়নে করোনায় প্রকোপে আমরা আতঙ্কিত। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে সচেতনতামূলক প্রচারণা চলছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মধুসুধন ধর বলেন, মীরপুর ইউনিয়নে আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের তৎপরতা রয়েছে। মঙ্গলবার এ এলাকার বাসিন্দারা এসে টিকা নিতে নিবন্ধন করতে দেখা গেছে। সবাইকে টিকার আওতায় আনতে কাজ চলছে।
কমেন্ট করুন